বাংলায় মুসলিম ঐতিহ্যের প্রতীক ‘সোনা মসজিদ’
ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:
বাংলার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক ইসলামি স্থাপনা। এমনই একটি নজির বড় সোনা মসজিদ। সুলতানি বাংলার রাজধানী গৌড়-লখনৌতির সবচেয়ে বড় মসজিদ এটি। নির্মাণ করা হয়েছে হোসেন শাহ স্থাপত্য রীতিতে। স্থাপনাটি ইটের গাঁথুনি দ্বারা নির্মিত। আর বাইরের দিকটা ঢাকা পাথর দিয়ে। মসজিদটি কে নির্মাণ করেছেন এবং এর নির্মাণের সময়ই বা কখন সে সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
উনিশ শতকের প্রথম দিকে ব্রিটিশ সেনাকর্মকর্তা মেজর ফ্রাঙ্কলিন মসজিদটির কাছে একটি শিলালিপি আবিষ্কার করেন। এটিকে এ মসজিদেরই শিলালিপি বলে মনে করা হতো। শিলালিপিটিতে ৯৩২ হিজরি (১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ) লেখা থাকায় অনুমান করা হয় সুলতান নাসিরুদ্দীন নুসরত শাহ মসজিদটি নির্মাণ করেন।
কিন্তু পরে মসজিদের ঠিক বাইরে উত্তর-পশ্চিম কোণে আরেকটি শিলালিপি পাওয়া যায়। এটি পাওয়ার পর আগের ধারণাটি ভুল বলে মনে করা হয়। ভারতের মালদহ রাষ্ট্রীয় জাদুঘরে শিলালিপিটি সংরক্ষিত আছে। এতে ৯৩০ হিজরিতে (১৫২৩ খ্রি:) নুসরত শাহ কর্তৃক একটি প্রবেশদ্বার নির্মাণের কথা উল্লেখ রয়েছে। শিলালিপিটি মসজিদের খুব কাছাকাছি ধ্বংসাবশেষের মধ্যে পাওয়া যাওয়ায় এটিকে মসজিদের বিশাল প্রবেশপথ বলেই ধরা হয়।
এ শিলালিপিতে উল্লেখ করা তারিখ ফ্রাঙ্কলিনের শিলালিপির সময়ের দুই-তিন বছর আগের।কিন্তু মসজিদ নির্মাণের আগেই তার প্রবেশপথ নির্মিত হয়েছিল এ কথা যুক্তিসঙ্গত নয়। বরং প্রচলিত রীতি হচ্ছে, মূল ইমারত নির্মাণের পরেই তার প্রবেশপথ নির্মিত হয়। এ জন্য এই শিলালিপিটি মসজিদের না বলে ধরে নেয়া যায়।
মসজিদটি সাধারণত ‘বারোদুয়ারী’ বা বারো দরজাবিশিষ্ট বলে পরিচিত। আবিদ আলী অবশ্য একে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তার মতে, বারোদুয়ারীর সাধারণ অর্থ ‘শ্রোতাদের মিলনায়তন’ এবং মসজিদের সামনের ভাগের বিস্তৃত অঙ্গনই মসজিদের এ নামকরণের কারণ।
মসজিদটি ইটের গাঁথুনির ওপর পাথরের আস্তরণে নির্মিত। চার কোণে প্রচলিত অষ্টভুজ বুরুজসহ আয়তাকার এ মসজিদের দৈর্ঘ্য ৫১.২ মিটার এবং প্রস্থ ২৩.১৫ মিটার। সামনের ভাগে রয়েছে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর বিস্তৃত বারান্দা। ১১টি সূচ্যগ্র খিলানযুক্ত প্রবেশপথ এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে প্রবেশপথ। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে অতিরিক্ত তিনটি করে প্রবেশপথসহ মসজিদটি তিন কাতারবিশিষ্ট। আয়তাকার পুরু স্তম্ভের ওপর স্থাপিত পেন্ডেন্টিভের ওপর বসানো আছে মোট ৪৪টি গম্বুজ। বর্তমানে কেবল বারান্দার ওপরের গম্বুজগুলো এবং মসজিদের পাশের দেয়াল টিকে আছে। মসজিদের ১১টি প্রবেশপথ বরাবর স্থাপিত মিহরাবগুলোর সবই এখন প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত।
সামনের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণসহ মসজিদের পূর্ব ও উত্তর দিকের দু’টি প্রবেশদ্বার এখনো বিদ্যমান। মাঝখান বরাবর খিলানপথ বিশিষ্ট প্রবেশদ্বার দু’টি একই ধরনের এবং মূল ইমারতের বক্রাকৃতি ছাদের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
মসজিদটি সাদামাটাভাবে নির্মাণের বিষয়ে সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে মধ্যযুগে উপমহাদেশে নির্মিত বিশাল সৌধগুলোর সাথে তুলনা করে এর একটি ব্যাখ্যা হয়ত দেয়া যায়।
ইন্দো-মুসলিম স্থাপত্যে সাধারণত অপেক্ষাকৃত ছোট স্থাপত্যকর্মে ‘সৈৗন্দর্য’ ও লক্ষ্য করা যায়। ইমারতের আকার যত বড় হয় তার সারল্যও তত বেশি হয়। এখানে ‘গাম্ভীর্য’ ও ‘অতি-অলঙ্করণ’ যে পাশাপাশি চলে না, বড় সোনা মসজিদের কারিগরদের মধ্যে এ দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুস্পষ্ট। আর যদি মসজিদটি হোসেন শাহ কর্তৃক তার রাজত্বের শেষ দিকে নির্মিত হয়ে থাকে, তাহলে একজন বৃদ্ধের সরল জীবনযাপনের প্রভাবও হয়ত এর পরিকল্পনা ও নকশায় পড়ে থাকবে। সূত্র: উইকিপিডিয়া।
প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল